বর্তমান সময়টা সিএইচসিপিদের জন্য ক্রান্তিকাল! চাকুরি রেভিনিউ নিয়ে সিএইচসিপিদের মধ্যে মারাত্নক হতাশা বিরাজ করছে। অনেকে হতাশার পাশাপাশি ভবিষ্যত জীবন নিয়ে শংকিত। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মিদের মানুষিক বিপর্যয়ে রেখে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা অর্জন আদৌ কি সম্ভব? তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে সিএইচসিপিরা। দেশের স্বাস্থ্য সেবায়ও অনেক বড় একটা অবদান রাখছে এই সিএইচসিপিদের। তাহলে তাদের কেন এই অবস্থা? আজ ১৩ বছরে বেতন বৃদ্ধি নেই, নিয়মিত কর্মীদের বেতন নেই। কেন রাজপথে নামে বারবার?
কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের জীবন তো এমন হওয়ার কথা না। অদৃশ্য এই প্রতিবন্ধকতা থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী কবে মুক্তি পাবে? সিএইচসিপি’রা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারো পরিবার আজ একদম নিরাপদ নয়, দু-মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকা যেন দুষ্কর। আমাদের সম্মানিত কতৃপক্ষ কী এই দ্বায় এড়াতে পারেন? দায়িত্বশীলদের কি এই পরিস্থিতি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না! কেন তাদের বেতন তিনমাস আটকে আছে?
সারাদেশে সিএইচসিপিদের কেন এই অবস্থা?
উদাহরণস্বরুপঃ ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সালে মাননীয় স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের প্রেরিত সিএইসসিপিদের চাকুরী দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজস্ব ভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালে এসেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৪ সালের এপ্রিলের ১৭ ও ২২ তারিখে আমাদের এসিআর সংগ্রহ ও সার্ভিস বহিঃ খোলার পরেও রাজস্বভুক্ত করন থমকে আছে। কিন্তু কেন? বার বার সিএইচসিপিদের রাজস্বকরণ থমকে যাচ্ছে?
দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকারের কমিটমেন্ট জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছে এই সিএইচসিপি’রা। প্রতিটি সিএইচসিপি তার শ্রম,মেধা, আন্তরিকতা আর দায়বদ্ধতা’কে মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছেন।
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এক ঝাঁক তরুন/তরুনী এই জবকে জীবনের পাথেয় হিসাবে গ্রহন করে নিজের সর্বৌচ্চ’টা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন গরীব-অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও মুখে হাঁসি ফুটাতে। মানুষের কাছে থেকে নিজের বাকী জীবনটাকে মানব সেবায় নিয়োজিত রেখে জীবনের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে।
কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছে এক ঝাঁক তীক্ষ্ণ মেধাবী কর্মী। যারা খুবই অল্প প্রশিক্ষণ গ্রহন করেও অত্যন্ত শুনামের সহিত কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা করেছে। দীর্ঘ বছরে সেবা দিতে গিয়ে একটিও অপ্রিতিকর ঘটনা জন্ম নেয়নি কমিউনিটি ক্লিনিকে। নির্দিষ্ট কাজের পরিধির বাহিরেও সিএইচসিপিরা অসামান্য অবদান রেখেছে। যেখানেই বিপদ দেখেছে সেখানেই সাহস করে সেবার মানষিকতা নিয়ে এগিয়ে গেছে সিএইচসিপিরা।
নিজের অন্তরে রাজস্বের স্বপ্ন লালনের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের বার বার রাজস্বের আশ্বাসে সিএইচসিপিরা আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছে কর্ম জগতে। এক বুক আশা নিয়েই রাজস্বের দিন গুনছিলো সিএইচসিপিরা। অনেক বৈষম্য আর অন্যায়কে মেনে নিয়েই ১৩ বছর অতিবাহিত করেছে হতভাগ্য এই কর্মীরা।
কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকুরী করতে গিয়ে হাজার হাজার মেধাবী যুবক আজ নিঃস্ব! মানব সেবা জীবনের ব্রত হিসাবে বেচে নিয়ে আজ পথ হারা! জীবনের অনেক মূল্যবান সুযোগকে জলাঞ্জলী দিয়ে, বয়সের গুরুত্বপুর্ণ সীমা পার করে আজ দিশেহারা। চাকুরী রাজস্ব করতে গিয়ে ফিরেছে এক বুক ব্যাথা নিয়ে। সহকর্মী-পরিবার-সমাজ সবার কাছে আজ লজ্জাবনত। সব হারিয়ে যেন অসার!