গ্রামীণ জনপদের কমিউনিটি ক্লিনিকের চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি পার করলো বঞ্চনার ১৩ বছর! জনগণের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গেল সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৪০০০ স্বাস্থ্য কর্মী (সিএইচসিপি) নিয়োগ দেয় ২০১১ সালে। যার ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষ হাতের নাগালে পাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা। সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট কোটি কোটি মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কমিউনিটি ক্লিনিক বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ক্লিনিকে সেবা প্রদানের জন্য তিন জন কর্মীর মধ্যে রাজস্ব খাতে নিয়োগ প্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে ২ দিন ক্লিনিকে সেবা দেয় আর যিনি ক্লিনিকের ইনচার্জ বা নিয়মিত ৬দিন ক্লিনিকের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ক্লিনিক প্রধান হিসেবে কর্মরত তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট, তা গেল তের বছরেও নির্ধারণ হয়নি ২০১১ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত সিএইচসিপি’র ।
গেল সরকারের আমলে তারা করোনা যুদ্ধে নিজেকে সপেঁ দিয়ে দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে অথবা লক-ডাউনে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে থেমে ছিলো না,প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে নিজেকে করোনা যোদ্ধা হিসেবে ফ্রন্ট লাইনে রেখে জীবনবাজি রেখে কাজ করেছে। সাধারণ রোগী দেখার পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, ক্লিনিকে আগত সেবা প্রত্যাশীদের রোগ-প্রতিরোধে কাউন্সেলিং করেন,প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করেন।
আরও পড়ুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১৮
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের ভিড় কমলেও বেড়ে ছিলো গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে। সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই ঝুঁকি নিয়েই সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েও সেবা প্রদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) সেবা দিয়েছে। তারা অব্যাহত রেখেছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা। গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত সিএইচসিপিরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই, সাধারণ মাস্ক পরেই রোগী দেখে দিয়েছেন পরামর্শ ও প্রাথমিক ঔষুধ। সাধারণ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন সাধারণ সর্দি, জ্বর,কাশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,, এ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখন জীবন বাঁচাতে ভিড় করছেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে। এনসিসিডি রোগের স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া হয় ক্লিনিকে। সাথে ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস চেক করা হয় । মানবিকতা আর দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসার টানে নিজের পরিবার ভুলেই গেছে সিএইচসিপি ।
মিনিমাম ৫ জনের কাজ একজন দিয়ে চলে। তাদের চাকুরী প্রকল্প না ট্রাস্ট, সরকারি না বেসরকারি সেটাও আজ অজানা! দীর্ঘ ১৩ বছর চাকরী করছে এক বেতনে। করোনা যুদ্ধে অনেকের মৃত্যুতে বা আক্রান্ত হয়ে সাদা কাগজের শোক ছাড়া কিছুই পায়নি। এছাড়া বিগত তের বছরে যারা মারা গেছে তারা শোক বার্তা ছাড়া কিছুই পায়নি। নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গেল সরকার প্রতিটি সাবেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। প্রতিটি ক্লিনিকেই সেবা প্রত্যাশীদের ভিড় লক্ষণীয়। দৈনিক গড়ে ৪০/৫০ জন রোগী আসে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে। যার ৫৫ শতাংশেরও বেশি রোগী সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা প্রায় চৌদ্দ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় বাসিন্দদের স্বাস্থ্য সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সেখানে প্রসূতি মায়ের নিরাপদ প্রসব সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ এই শ্লোগান ধারণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ ২০২০-২০২১ বর্ষ ব্যাপী অনেক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। কিন্তু গ্রামীণ জনপদের প্রতিষ্টান কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের চাকুরী র্দীঘ তের বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেনি। ১৯৯৬ সনে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো চালু করার পর মাঝ পথে এসে এগুলো বন্ধ হয়ে যায়, পরে গেল সরকার ২০০৯ সাল থেকে পুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করে রিভাইটালাইজেসন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প নামে।
এই প্রকল্প জুন ২০১৪ সালে শেষ হয়ে পুনঃ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ পর্যন্ত চলে এবং পরর্বতীতে অপারেশন প্ল্যান কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার নামে (২০১৭-২০২২) চলমান আছে কিন্তু এরই মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল-২০১৮ পাশ করে অপারেশন প্ল্যান থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক কে ট্রাস্ট র্বোডের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় ৩ হাজার ১৩৮টি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৬১টি। ২০২২ সালের মধ্যে নতুন আরো ১০২৯ টি সহ সারাদেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সংক্রান্ত সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের পথচলা শুরু হয়। আর ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয় একজন করে সিএইচসিপি।
স্বাস্থ্য খাতে জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। সারাদেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে এগুতে থাকে।কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সিএইচসিপি প্রদত্ত সেবাসমূহ হলো-
- মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা,
- শিশু রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা,
- প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা,
- ইপিআই বা টিকা,
- এআরআই-এর চিকিৎসা,
- সদ্য বিবাহিতা এবং অন্তঃসত্তা মহিলাদের নিবন্ধীকরণ,
- সম্ভাব্য প্রসব তারিখ নিরূপণ ও সংরক্ষণ,
- পুষ্টি শিক্ষা ও সম্পূরক মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট প্রদান,
- সদ্য প্রসূতি মা,
- মারাত্মক পুষ্টিহীন ও দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের ‘ভিটামিন-এ’ ক্যাপসুল প্রদান,
- স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে শিক্ষা ও পরামর্শ,
- সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা,
- বয়স্কদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান,
- কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা,
- শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত ও রেফার করা,
- জরুরি ও জটিল রোগী উচ্চতর পর্যায়ে রেফারের মাধ্যমে কার্যকরী রেফারেল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা ও সেবাসমূহের তথ্য যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের প্রেরণ করে।
দেশের গ্রাম পর্যায়ে ক্লিনিকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৮ কোটির অধিক ভিজিটর সেবা লাভ করেছেন যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু । দেশে- বিদেশে আজ রোল মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক। দেশে রোগী সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট ,সরকার পেয়েছে নানা পুরস্কার কিন্তু তের বছর ধরে কর্তৃপক্ষের দেয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হ্ওয়ায় দিন দিন মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের প্রায় চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি। নিয়মিত বেতন ভাতা পায় না।একই বেতনে চাকুরী করছে র্দীঘ তের বছর,নেই কোন ইনক্রিমেন্ট। পাচ্ছে না ওপির সুবিধাও। ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)’র (২০১৭-২০২২) অধীন অপারেশনাল প্ল্যানে (ওপিতে) সিএইচসিপিদের ইনক্রিমেন্ট ও ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে চাকুরী স্থানান্থরের র্নিদেশনাও রয়েছে। কিন্তু অধ্যাবধি কোন কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি, বারংবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সিএইচসিপিদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সনে সিএইচসিপিদের চাকরী স্থায়ী করণ এর নীতিগত সিদ্বান্তের কথা চিঠির মাধ্যমে সিভিল র্সাজনদের জানান তৎকালীন পরিচালক প্রশাসন ডাঃ মোঃ শাহন্ওেয়াজ। আবার ২২ শে এপ্রিল ২০১৪ সনে তৎকালিন প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ডাঃ মাখদুমা র্নাগিস চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্থরের নিমিত্তে সিএইচসিপিদের সার্ভিস বুক খোলা ও র্বাষিক গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলে চিঠির পাঠান সিভিল র্সাজনদের নিকট। ফলে সিএইচসিপিরা চাকুরী রাজস্বের স্বপ্ন দেখেছিলো ।
গত র্দীঘ তের বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প অফিস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিএইচসিপিদের চাকুরী রাজস্বকরণের বিষয়ের আলোকে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি করে। এরই অংশ হিসাবে গত তারিখ ১৬.০৬.২০১৩ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩ অধিশাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা স্মারক নং- ৪৫.১৭৪.০১৫.০১০০.০০১.২০১১-২১৬ এ রিভাইটালাইজেসন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (আরসিএইসিআইবি) শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)দেরকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর সম্পর্কিত প্রস্তাব প্রেরণ করেন। গত তারিখ ১৯/০৯/২০১৩, স্বাস্থ্য অধীদপ্তর, মহাখালী ঢাকা, স্মারক নং স্বা:অধি:/প্রশা-৩/বিবিধ-৩/২০০৮/৪৬৬৮ এ উলে¬খ করা হয় যে সিএইচসিপিদের চাকুরী স্থায়ী করনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন আছে। এর পর গত ১৭/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্বারক নং- আরসিএইচসিআইবি/প্রশা-১৩২/২০১২/৬৫৪ এ সিএইচসিপিদের চাকুরী বহি: খুলতে বলা হয়, এবং গত ২২/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্বারক নং- আরসিএইচসিআইবি/সিসি/সার্কুলার-১২৪/৬৭১ এ সিএইচসিপিদের হাল নাগাদ বার্ষিক/বিশেষ গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) চাওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় গত তারিখ ১৯/০৬/২০১৪ স্মারক নং- আরসিএইচসিআইবি/কন:/শৃঙ্খলা-৯৭/২০১২/৯২৭ এ উলে¬খ করা হয় যে, কোন সিএইচসিপি অপরাধের দায়ে বা কোন মোকাদ্দমায় চার্জশীটভুক্ত হলে তা সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করণ এবং তার চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়া প্রসঙ্গে নোটিস প্রদান করা হয়।বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলধারার সাথে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে জুলাই ২০১১ হতে আরসিএইসিআইবি প্রকল্পের পাশাপাশি ৩য় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)এর কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)অপারেশনাল প¬ø্যান এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে যা ডিসেম্বর ২০১৬ তে সমাপ্ত হয়েছে।
বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচীতে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যান জানুয়ারী ২০১৭ হতে জুন ২০২২ মেয়াদে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জুন/২০১৭ইং হতে অপারেশন প্ল্যানভুক্ত করে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের র্কাযক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু নতুন প্রকল্প চালুর আগেই অধ্যাবধি চাকুরী রাজস্ব না হ্ওয়ায় হাইর্কোটের দ্বারস্থ হন সিএইচসিপিদের অনেকে।
ইতির্পুবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। তাদেরকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে স্থানান্তর করে গত ১৫ মে,২০১৭ চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তাদের নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের আগেই রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে হাইর্কোটের দেওয়া রায়ের অনুলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
যাহা বাস্তবায়ন করার জন্য গত ১৮/০১/২০১৮ খ্রী তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এ্যাসেসিয়েশন (বিসিএইচসিপিএ), দাবী আদায় বাস্তবায়ন কমিটি ২০/০১/২০১৮ খ্রী তারিখ হতে কর্মসুচী ঘোষনা করে। ঘোষিত কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে রিক্ত হস্তে কমিউনিটি বেইজ হেলথ কেয়ার সিবিএইচসি স্মারক নং- স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন-২২/২০১৮/৩১৭ তারিখ ২৭/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক ০৩/০৩/২০১৮ খ্রী সিএইচসিপিরা কর্মে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। আর যোক্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে স্মারক নং স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন/সিএইচসিপি/শৃৃঙ্খলা ১৬/২০১৮/২১৩ তারিখ ০৩/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক আটজন সিএইচসিপিকে প্রাথমিক বহিষ্কার করে,অপরাধ তাদের ডাকে আন্দোলন জমেছিলো-ন্যায্য অধিকার চেয়েছিলো।কারণ র্দশানো নোটিশ প্রেরণ করলে লিখিত জবাব দাখিল করেও তার সুরাহা হয় র্দীঘ সময় পরে।
দেশে ন্যায্য অধিকারের জন্য পেশাজীবীদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটি মহল সিএইচসিপিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম নিরুৎসাহিত করার জন্য সাসপেন্ডকে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছে। কৌশলে চাকুরী রাজস্বের আশ্বাসের বাস্তবায়ন না করে হাইকোর্টের রাজস্বের পক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদের চাকরি জাতীয়করণের (রাজস্ব) বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন (মোডিফাই) করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালত সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে তাদের চাকরি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (৬ মার্চ,২০২২) রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।গেল সরকার ট্রাস্ট বাস্তবায়নে একধরনের জোর করেই কমিউনিটি ক্লিনিককের কর্মীদের স্থায়ী করার দোহাই দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাশ করে। প্রবিধান প্রণয়ন পূর্বক সকল সুবিধা প্রদানের কথা প্রকাশিত গেজেটে রয়েছে। ট্রাস্ট র্বোড গঠন ও গেজেট প্রকাশের র্দীঘ ছয় বছর অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনও প্রবিধান প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে পারেনি।চাকরী স্থায়ী করে সুযোগ সুবিধা দিতে পারেনি। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কারিগর খ্যাত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা স্বত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না, নেই ইনক্রিমেন্টও।এক বেতনে আজ তের বছর পার ।
স্বাস্থ্য কর্মীদের জোর করে বিষ পানের মতো কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহয়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮ বাতিল চায়। সিএইচসিপিরা হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের চাকুরী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত সহ বকেয়া ইনক্রিমেন্ট ,১১ তম গ্রেড ,তিন স্থরের পদোন্নতি ও ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নব গঠিত ছাত্র জনতার অর্ন্তবর্তী কালীন সরকারের মান্যবর প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য সকল উপদেষ্টা গণের সুদৃষ্টি কামনা করেন। দ্রুত তের বছরের বঞ্চনার দাবি পূরণে আহ্বান করেছেন সিএইচসিপি পরিবারের লোকজন।তের বছর ধরে সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান কমার আশংকা করছে সচেতন মহল। এ রকম চলতে থাকেলে ভবিষ্যতে এসডিজি অর্জন হুমকির মুখে পরতে পারে। দেশে প্রত্যেক পেশাজীবীদের আলাদা সংগঠন রয়েছে।তারই মতো বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশন হলো ১৪০০০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাণের সংগঠন, তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্বাচন ছিলো গত ২৬ ফেব্রুয়ারী,২০২১ইং সরকারী ছুটির দিন শুক্রবার। কিন্তু ঐদিন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য সমেবেত হওয়ার অভিযোগ এনে নব নির্বাচিত সভাপতি সহ কয়েকজনকে সাসপেন্ড করে সিবিএইচসি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। স্বাস্থ্য কর্মীদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এস.এম রেজাউল করিম
সভাপতি, সিএইচসিপি রামু, কক্সবাজার।