গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’র সহযোগিতায় জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি এবং ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি। বাংলাদেশে নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
আপনি কি জানেন, ইউনিসেফ কর্তৃক আয়োজিত হিউমান পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকার একটি ডোজ মেয়েদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এই টিকা বিনামুল্যে প্রদান করা হবে। সময়মত টিকা নিতে আজই নিবন্ধন করুন এই লিংকেঃ https://vaxepi.gov.bd।
টিকা গ্রহণের সুবিধাঃ
- এইচপিভি টিকা জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী অথবা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীদের জন্য এই টিকা অধিকতর কার্যকর।
- এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর।
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এই টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।
HPV টিকার জন্য কতটি ডোজ নিতে হবে?
- জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট।
HPV ভ্যাক্সিনেশন কারা গ্রহণ করতে পারবেন?
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী এবং
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী।
টিকা গ্রহণের স্থানঃ
- ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী – অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরী – ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে।
HPV ভ্যাক্সিনেশন সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
- যেখানে ভ্যাকসিন ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল সেখানে লালভাব বা ব্যথা;
- জ্বর;
- মাথা ঘোরা;
- বমি বমি ভাব;
- পেশী বা জয়েন্টে ব্যথা;
- পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
এইচপিভি টিকা নিবন্ধন পদ্ধতি
রেজিস্ট্রেশন করতে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশন করতে হলে সঠিক জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন এবং জন্ম তারিখ সঠিক হলে এই পোর্টালে নিবন্ধন করতে পারবেন। জন্ম নিবন্ধন সার্ভার থেকে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কিনা তা যাচাই করা যায়। প্রদত্ত লিঙ্কে যেয়ে আপনার ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, জন্ম তারিখ (বছর-মাস-দিন) এবং ক্যাপচা পূরন করে সার্চ দিলেই জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে যাবেন। লিংকঃ https://everify.bdris.gov.bd/
১ম ধাপঃ অনলাইনে নিবন্ধনঃ
- প্রথমে এই পোর্টালের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ নম্বর ও সঠিক মোবাইল নম্বর যাচাইপূর্বক অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। লিংকঃ https://vaxepi.gov.bd।
২য় ধাপঃ কাঙ্ক্ষিত টিকাদান প্রোগামে নিবন্ধন করুনঃ
- আপনার প্রোফাইলে থাকা টিকাদান তালিকা থেকে কাঙ্ক্ষিত টিকাটি নির্বাচন করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করে নিবন্ধন করুন।
৩য় ধাপঃ টিকা কার্ড ডাউনলোডঃ
- টিকা কার্ডটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন, টিকা গ্রহণের জন্য কার্ডটি আবশ্যক, কার্ডে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করুন।
৪র্থ ধাপঃ টিকা কেন্দ্রে টিকা গ্রহণ করুনঃ
- টিকা গ্রহণের জন্য টিকা কার্ডটি নিয়ে নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে যান। ভবিষ্যতে বিভিন্ন নাগরিক সেবা এবং টিকা পাওয়ার প্রমাণস্বরূপ টিকা কার্ডটি সংরক্ষণ করুন।
জরায়ু ক্যান্সারের টিকা কেন দিবেন?
জরায়ুমুখ ক্যান্সার নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ মরণ-ব্যাধি। এই ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। WHO-এর তথ্য মতে ২০২০ সালে সমগ্র বিশ্বে ৬.০৪ লাখ (দৈনিক ১৬৫০ জনেরও অধিক) মহিলা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩.৪২ লাখ (দৈনিক ৯৩৫ জনেরও অধিক) নারী মৃত্যুবরণ করেছেন।বাংলাদেশে ৫ কোটির অধিক নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সার (Cervical Cancer)-এর ঝুঁকিতে আছেন আর প্রতিবছর গড়ে সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং বছরে ১০ হাজারের অধিক নারী মৃত্যুবরণ করেন। যদিও সমস্ত মহিলার সার্ভিকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে, এটি প্রায়ই ৩০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল HPV বা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস।
সার্ভিকাল ক্যান্সারের লক্ষণ ও জটিলতাঃ
প্রি-ক্যান্সারাস ক্ষত সার্ভিকাল ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, সার্ভিকাল ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
- মাসিকের মধ্যে দাগ বা হালকা রক্তপাত
- বর্ধিত, অনিয়মিত, বা দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
- মেনোপজের পরে দাগ বা রক্তপাত
- যৌন মিলনের পর রক্তপাত
- যোনিতে অস্বস্তি
- পিঠে, শ্রোণীচক্রে বা উভয় পায়ে অবিরাম ব্যথা
- উভয় পা বা উভয় পা ফুলে যাওয়া
- যদি ক্যান্সার জরায়ুমুখ থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তবে এটি অন্যান্য উপসর্গ দেখাতে পারে।
সার্ভিকাল ক্যান্সার কিভাবে সংক্রমিত হয়?
- জরায়ু মুখের ক্যান্সার কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয় এবং তা ছড়ানো যায় না। সার্ভিকাল ক্যান্সার নির্দিষ্ট ধরণের HPV দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা যৌন যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণঃ
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human Papilloma Virus (HPV)) নামক ভাইরাস সংক্রমণ এই ব্যাধির কারণ।
- HPV একধরনের ভাইরাস যা জরায়ুমুখ ছাড়াও আরও অনেক ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
- প্রায় ২০০ রকমেরও বেশি HPV রয়েছে।
- HPV Type- 16 & 18 প্রায় ৭৫% জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াঃ
ভায়া (VIA) টেস্ট-এর মাধ্যমে মাত্র এক মিনিটের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়। আপনার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ বিনামূল্যে পরীক্ষার করতে পারবেন।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ কীভাবে?
- HPV ভ্যাক্সিন নিয়ে।
- নিয়মিত ভায়া ও প্যাপ স্মেয়ার টেস্ট করে।
- অল্পবয়সে বিয়ে ও সন্তানধারণ বন্ধ করে।
- স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে।