দাঁত পোকায় খাওয়া, গর্ত বা ক্যাভিটি – আমরা সবাই কমবেশি এটির সাথে পরিচিত। সত্যিই কি পোকা দাঁত খায়? এই পোকা কি খুব ভয়ানক? না, কোনও “পোকা” আমাদের দাঁত খেয়ে ক্ষয় করে না ঠিকই, কিন্তু এই ক্ষয়কে সময়মতো চিকিৎসা না করিয়ে অবহেলা করলে এটি আপনাকে আইসিইউতে পাঠাতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এতটাই মারাত্মক এই দন্তক্ষয়!
মূলত আমরা যে শর্করা বা চিনিজাতীয় খাবার খাই, মুখের ডেন্টাল প্লাকে থাকা ব্যাকটেরিয়া সেটির বিপাক ঘটানোর ফলে অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। শরীরের সবচেয়ে কঠিন অংশ দাঁতের এনামেল এই অ্যাসিডে ক্ষয় হয়ে যায়। এটিকেই আমরা “দাঁত পোকায় খাওয়া” বলে চিনি, তবে এর আসল নাম ডেন্টাল ক্যারিজ। দুঃখজনক সত্য এই যে, এনামেল একবার ক্ষয় হয়ে গেলে এটিকে প্রাকৃতিকভাবে নতুন করে তৈরি করার ক্ষমতা শরীরের নেই। তাই কারও যদি আশা থাকে, এই ক্ষয় নিজ থেকেই পূরণ হয়ে যাবে, তবে সেই আশা বাদ দিয়ে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষয় পূরণ করিয়ে নেওয়াই উত্তম।
ক্ষয়ের শুরুর দিকে তেমন অসুবিধা বোধ হয় না বলে অনেকে এর চিকিৎসাও করান না। এতে করে ক্ষয় আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় অসহনীয় ব্যথা। দাঁত তো বটেই, কপাল, চোখ, কান, গলায় সহ ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ পর্যায়ে অনেকে ঔষধের দোকান থেকে ব্যথানাশক কিনে খেয়ে ব্যথা উপশমের চেষ্টা করেন, কেউ কেউ তো অ্যান্টিবায়োটিকও খেয়ে ফেলেন! এগুলো শুধু ভুল না, রীতিমত বিপজ্জনক!
কেননা একে তো কোন্ ঔষধ কীভাবে শরীরে কাজ করে, কোন্ রোগীকে কোন্ ঔষধ দেওয়া নিরাপদ, বা কোনটা দিলে তাঁর ক্ষতি হতে পারে- ঔষধ নির্বাচনের জন্যে সেই জ্ঞান থাকা লাগে। উপরন্তু এসব ঔষধে দাঁতের ক্ষয়রোগের “সমাধান” হয় না। বিডিএস ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে দাঁতটির চিকিৎসা নিয়ে ক্ষয় পূরণ করা এবং ক্ষয় থামানো হলো আসল সমাধান। ঔষধ খেয়ে ব্যথা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ক্ষয় কিন্তু তাতে থেমে নেই! সে বাড়তে বাড়তে বিরাট ক্যাভিটি হয়ে এক সময় দাঁতটা ভেঙে যেতে থাকে। দাঁতের মজ্জায় উপর্যুপরি প্রদাহ আর ইনফেকশন হয়ে তা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। অনেকের হয়তো মনে হতে পারে, এখানেই শেষ। কিন্তু না, এখান থেকেই বরং জটিলতার শুরু।
এই আক্রান্ত দাঁতের সংক্রমণ থেকে ধীরে ধীরে periapical granuloma, radicular cyst, abscess, jaw osteomyelitis (চোয়ালের হাড় ও হাড়ের মজ্জার প্রদাহ), cellulitis থেকে শুরু করে Ludwig’s angina, septicaemia, হৃৎপিণ্ডে subacute bacterial endocarditis, মস্তিষ্কে cavernous sinus thrombosis, brain abscess, subdural empyema এর মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতিও তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে! শুধু দাঁতের ক্ষয় থেকে হওয়া infection-ই নয়, দাঁত ও মাড়ির অন্যান্য ইনফেকশন, কিংবা ভুয়া চিকিৎসকের ভুল ব্যবস্থাপনা ও অপচিকিৎসার কারণে মুখে ইনফেকশন হলেও তার পরিণতি এমন হতে পারে, যদি সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করানো হয়।
তাই বলে দাঁতে ক্ষয় দেখা দিলেই এসব মারাত্মক জটিলতার ভয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা যদি মুখ ও দাঁতের যত্নে সচেতন হই, নিয়মিত চেকআপ করাই, মুখ বা দাঁতে সমস্যা দেখা দিলে সাথেসাথেই রেজিস্টার্ড (বিডিএস) ডেন্টাল সার্জনকে দেখাই এবং চিকিৎসায় গাফিলতি না করি তাহলে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব, ইন শা আল্লাহ। মুখ বা দাঁতের যেকোন সমস্যায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হেলথমেন তো আছেই!
ডা. ইফফাত সামরিন মুনা।