“দাঁত ব্রাশ করতে গেলে মাড়ি থেকে রক্ত আসে”, “সকালে ঘুম থেকে উঠে থুথু ফেললে তাতে রক্ত দেখা যায়”, “আপেল পেয়ারা কামড়ে খেতে গেলে দেখি তাতে রক্ত লেগে আছে”- মুখ ও দন্তচিকিৎসকদের কাছে রোগীকে অহরহই এমন অভিযোগ করতে দেখা যায়। আসুন জেনে নিই এমন সমস্যার সম্ভাব্য কিছু কারণ। মাড়ি থেকে রক্তপাতের প্রধানতম কারণ জিনজিভাইটিস। এটি অত্যন্ত সাধারণ একটি সমস্যা। এতে মাড়িতে প্রদাহ হয়ে মাড়ি লাল হয়ে যায় এবং অল্প আঘাতেই মাড়ি থেকে রক্ত বেরোয়, দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস (পাথর) দেখা যায়, দাঁত শিরশির করে। মুখে দুর্গন্ধ এবং মাড়িতে হালকা ব্যথাও থাকতে পারে। এ পর্যায়ে অনেকেই ঔষধের দোকান থেকে ইচ্ছেমতো মাউথওয়াশ, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক কিনে এনে ব্যবহার করতে থাকেন, যা মোটেও উচিত না!
আমাদের বুঝতে হবে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া সাময়িক বন্ধ করা নয়, বরং যে কারণে রক্ত পড়ছে, সেই কারণটার চিকিৎসা করানো উচিত। নইলে এই জিনজিভাইটিস ধীরে ধীরে পেরিওডন্টাইটিস এর দিকে অগ্রসর হবে। পেরিওডন্টাইটিস এ শিরশির অনুভূতি, মুখে দুর্গন্ধ আরও বাড়ে। দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী অংশে আরও বেশি ক্যালকুলাস (পাথর) জমা হতে থাকে। ফলে মাড়ি দাঁত থেকে সরে গিয়ে আলগা হয়ে যায়। তখন মাড়ির এই ফাঁক দিয়ে খাবার ঢুকে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ধীরেধীরে দাঁতকে চোয়ালের সঙ্গে শক্তভাবে আটকে রাখে যে পেরিওডন্টাল লিগামেন্ট, তা নষ্ট হয়; চোয়ালের হাড়েও ক্ষয় দেখা দিতে পারে! এতে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়, দাঁত নিজে থেকে পড়েও যেতে পারে। এমনকি এই পেরিওডন্টাইটিস রক্তনালীতে চর্বি জমা, হৃদরোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন খিঁচুনি ও কম ওজনের শিশু জন্মদানেরও ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করা হয়! অথচ জিনজিভাইটিস পর্যায়ে থাকতেই চিকিৎসা করিয়ে ফেললে পেরিওডন্টাইটিস খুব সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মাড়ি থেকে রক্তপাতের সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- ১) মাড়ির প্রদাহজনিত রোগ (জিনজিভাইটিস, পেরিওডন্টাইটিস)- প্রধানতম কারণ।
- ২) শক্ত ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা, বেশি জোরে চাপ/ঘষা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা।
- ৩) ভুল পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা।
- ৪) শরীরে হরমোনের তারতম্য, যেমন- বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা।
- ৫) মুখে ত্রুটিপূর্ণ রেস্টোরেশন(ফিলিং) বা প্রোসথেসিস(আর্টিফিসিয়াল ক্রাউন, ব্রিজ, ডেঞ্চার) দ্বারা মাড়িতে ক্রমাগত আঘাত লাগা,
- ৬) রক্তের রোগ, যেমন- idiopathic thrombocytopaenic purpura, haemophilia, leukaemia (রক্তের ক্যান্সার)।
- ৭) Scurvy.
- ৮) কিছু সুনির্দিষ্ট ঔষধ সেবন।
তাই মাড়ি থেকে রক্ত আসলে অবহেলা না করে বিএমডিসি কর্তৃক রেজিস্টার্ড বিডিএস ডাক্তারকে দেখিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিন। ৬ মাস পরপর পুরো পরিবারের মুখ ও দাঁতের চেকআপের অভ্যাস গড়ে তুলুন। দন্ত বিষয়ক যেকোন সমস্যা অবহেলা না করে ঘরে বসেই নির্ভেজাল উপায়ে ডাক্তারের চিকিৎসা-পরামর্শ নিন হেলথমেন এ।
ডা. ইফফাত সামরিন মুনা।
Oral and dental practitioner, HealthMen