আক্কেল দাঁত | আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ | আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ওষুধ

আক্কেল দাঁত কী? মানুষের ১৭-২৪ বছর বয়সে দুই চোয়ালের শেষের দিকে একটি করে যে মোট চারটি দাঁত ওঠে, সেগুলোকেই আক্কেল দাঁত/third molar tooth/wisdom tooth বলে। নতুন দাঁতের চারপাশে সিস্ট তৈরি হতে পারে। যদি তাদের চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তারা আপনার চোয়াল ফাঁপা করে ফেলতে পারে এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে ।

কেন একে আক্কেল দাঁত বলা হয়?

মানুষের অন্যান্য স্থায়ী দাঁতগুলো শিশু বয়সে (১৪ বছর বয়সের মধ্যে) আসলেও চোয়ালের শেষ দাঁত তুলনামূলক “আক্কেলসম্পন্ন” হওয়ার বয়সে আসে। তাই একে আক্কেল দাঁত বা wisdom tooth বলা হয়। তবে এই দাঁতের সঙ্গে আক্কেল বা wisdom এর সরাসরি কোনও সংযোগ নেই।

আক্কেল দাঁত না ওঠা কি কোনও সমস্যা?

জন্মগতভাবে অনেকের চোয়ালের ভেতর আক্কেল দাঁত অনুপস্থিত থাকতে পারে। সেটা সবসময় খুব একটা সমস্যার নয়। তবে ভেতরে দাঁত আছে, কোনও কারণে উঠে আসতে পারছে না, এমন দাঁত সমস্যা করার আশংকা থাকে।

আক্কেল দাঁত উঠতে কী ধরণের সমস্যা হতে পারে?

  • ১) দাঁত অস্বাভাবিক পজিশানে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে দাঁত উঠে আসতে পারে না। গালের দিকে, তালু/জিহ্বার দিকে, সামনে বা পেছনের দিকে দাঁত হেলে থাকতে পারে।
  • ২) দাঁত ওঠার পথে বাধা। কখনও দাঁতের উপরস্থ মাড়ির কিছু অংশ আবার কখনও চোয়ালের হাড় সহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সিস্টের কারণেও দাঁত উঠে আসতে বাধা পায়।
  • ৩) মুখে দাঁত নির্বিঘ্নে উঠে আসার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা।

আক্কেল দাঁত | আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ

image

 

লক্ষণ/উপসর্গ কী কী হতে পারে?

  • ১) দাঁতে ব্যথা হওয়া। এই ব্যথা চোয়াল, গলা, কানের দিকেও অনুভূত হতে পারে।
  • ২) ব্যথার কারণে মুখ হাঁ করতে কষ্ট হওয়া।
  • ৩) আক্রান্ত দাঁতের মাড়ি, গাল, চেহারা ফুলে ওঠা।
  • ৪) মাড়ি থেকে পুঁজ, রক্ত বের হওয়া।
  • ৫) ফোলা মাড়িতে বিপরীত দিকের দাঁতের কামড় লেগে ক্ষত হওয়া।

 

সম্ভাব্য জটিলতাগুলো কী?

  1. আক্কেল দাঁত হেলে থাকলে সেই দাঁত ও তার সামনের দাঁতের মধ্যবর্তী জায়গায় একটি ফাঁকা স্থান তৈরি হয়। এই ফাঁকা অংশে খাদ্যকণা জমে দুই দাঁতেই ক্ষয় সৃষ্টি করতে পারে। সাথে এই অংশের মাড়ির প্রদাহ ও সংক্রমণের ঝুঁকি তো থাকেই।
  2. নিচের চোয়ালের আক্কেল দাঁতকে ঢেকে রাখা মাড়ি ফুলে উঠলে তাতে ওপরের চোয়ালের দাঁতের অনবরত কামড় লেগে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। দাঁত গাল বা জিহ্বার দিকে বাঁকা হয়ে উঠলেও গাল/জিহ্বায় দাঁতের অনবরত ঘষা লেগে ক্ষত হতে পারে। মনে রাখা দরকার, মুখে অনবরত আঘাতজনিত যেকোনও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে!
  3. দাঁতকে ঘিরে সিস্ট তৈরি হতে পারে।
  4. দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা হয়ে মাড়ি ভেদ করে মুখের ভেতরের দিকে অথবা চেহারার চামড়া ফেটে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে।
  5. রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের ভুলভাল ও যথেচ্ছ ব্যবহার সাধারণ সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে।
  6. দাঁতের সংক্রমণ মুখমণ্ডল ও গলার ভেতরের বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে বলে space infection. Cellulitis হিসেবেই মূলত space infection গুলো ছড়ায়।
  7. Cellulitis এর তীব্রতর রূপ হচ্ছে Ludwig’s angina. প্রধানত নিচের পাটির শেষের দুই দাঁতের ইনফেকশন থেকে এই “জীবন সংশয়কারী পরিস্থিতি” সৃষ্টি হতে পারে।

আক্কেল দাঁতের সমস্যায় কী ঔষধ খাবো?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু ঔষধ কোনও সমাধান না। ঔষধ খেলে কি আপনার হেলে থাকা দাঁত সঠিক অবস্থানে চলে আসবে? দাঁত উঠতে গিয়ে যে হাড়ে বাধা পাচ্ছে, ঔষধ খেলে সেই হাড় সরে গিয়ে দাঁত উঠে আসবে? কখনোই না। ব্যথানাশক খেয়ে ব্যথা হয়তো সাময়িক কমে যেতে পারে, কিন্তু সমস্যাযুক্ত দাঁতটি মুখে রয়েই যাচ্ছে। সেই সাথে থেকে যাচ্ছে ভবিষ্যতে আবারও ব্যথা বা অন্যান্য জটিলতা হবার ঝুঁকিও। তাছাড়া রেজিস্টার্ড ডাক্তার ছাড়া অন্য কারও কথায় ঔষধ নিলে দাঁতের ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী উপযুক্ত নিরাপদ ঔষধ নির্বাচনে ভুল হওয়া তো খুবই স্বাভাবিক।

তাহলে আক্কেল দাঁতের সমস্যায় করণীয় কী?

  • দাঁত ব্রাশ করার সময় শেষের দাঁতটি প্রায়শই অবহেলিত থেকে যায়। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে, মনোযোগ দিয়ে মুখগহ্বর পরিষ্কার করতে হবে।
  • কোনও ধরণের ব্যথা, ফোলা দেখা দিলেই রেজিস্টার্ড (বিডিএস) ডেন্টাল সার্জনকে দেখিয়ে ফেলতে হবে এবং উনি যে পরামর্শ দেন সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়ে ফেলতে হবে। হেলাফেলা করলে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।
  • সাধারণত ৬ মাস পরপর যাঁরা মুখ ও দাঁতের চেকআপ করান, তাঁরা দাঁতের যন্ত্রণায় ভোগেন কম। কারণ ডাক্তার আগেই তাঁদের মুখের অবস্থা দেখে সম্ভাব্য সমস্যা এবং তা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দেন। ফলে রোগযন্ত্রণা শুরুর আগেই সেটিকে রুখে দেওয়া যায়।

ডা. ইফফাত সামরিন মুনা।
ডেন্টাল সার্জন।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top