Tetanus (টিটেনাস) রোগ এবং ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া

প্রায় একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আমার হাত বা পা বা শরীরের কোনো অংশ লোহার জিনিস দিয়ে কেটে গেছে তাহলে কি tetanus toxoid নিয়ে নেব? আগে জানতে হবে টিটেনাস রোগটি কোন ক্ষেত্রে হতে পারে? টিটেনাস রোগটি Clostridium tetani নামক এক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। এটি একটি anaerobic bacteria তাই এটি শরীরের যে স্থানে অক্সিজেন পৌঁছায় না সেই সমস্ত স্থানে বংশবিস্তার করে এবং tetanus রোগটি হয়।

নবজাতক ও মায়ের টিটেনাস প্রতিরোধের জন্য টিটি টিকা নিতে হয়। সাধারণত মেয়েরা প্রজননকালীন সময়ে অর্থাৎ ১৫-৪৯ বছর বয়সে মোট ৫টি টিটি টিকা নেয়। যদি কোন গর্ভবতী মা কখনও টিটি টিকা না নেন তাহলে যে যে সময়ে টিকাটি নিতে হবে –

  • গর্ভকালীন ৫ মাস পর ১ম টিকা
  • গর্ভকালীন ৬ মাস পর ২য় টিকা
  • সন্তান জন্মের পর অর্থাৎ ২য় টিকা নেওয়ার ৬ মাস পর ৩য় টিকা
  • ৩য় টিকা নেওয়ার ১ বছর পর ৪র্থ টিকা, এবং
  • ৪র্থ টিকা নেওয়ার ১ বছর পর ৫ম টিকা

এভাবে ৫টি টিটি টিকার ডোজ সম্পন্ন করতে হবে। এতে করে আপনার এবং নবজাতক সন্তানের টিটেনাস প্রতিরোধ হবে। টিকা দেওয়ার স্থানে ১২-২৪ ঘন্টা ব্যাথা হতে পারে তাই ভয়ের কিছু নেই।

 

Tetanus (টিটেনাস) রোগ এবং ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া

 

 

অনেকে জিজ্ঞেস করতেই পারেন যে, “জন্মের পর তো একবার দেওয়া হচ্ছে ভ্যাক্সিন। আবার লোহার যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটলে কেন ভ্যাক্সিন দিবো? ঐ ভ্যাক্সিনগুলো সারাজীবন ধরে ইমিউনিটি দিবে না। অতএব যেকোনো সময় পুরাতন লোহার জিনিস দিয়ে কেটে গেলে ২-৪ দিনের মধ্যে ভ্যাক্সিন দেওয়া জরুরী। নাহয় ঐ ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। তাই সচেতন থাকবেন সবসময়।

 

কোন ক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই tetanus toxoid নেওয়া উচিত:
  • যদি শরীরের কোনও অংশ, কোনও জিনিস অনেকদিন ধরে কোনো অপরিষ্কার জায়গায় পড়ে আছে তার দ্বারা কেটে যায়, তাহলে অবশ্যই tetanus toxoid নেবেন।
  • যদি নর্দমায় পড়ে গিয়ে শরীরের কোনো অংশ কেটে যায় তাহলে tetanus toxoid নেবেন।
  • কোনো জং ধরা লোহা যদি অনেকদিন ধরে কোনও নোংরা জায়গায় পড়ে থাকে তাতে কাটলে অবশ্যই tetanus toxoid নেবেন।
  • যদি ক্ষতস্থান খুব deeply কেটে যায় তাহলে tetanus toxoid নেবেন।যদি কাটার 3 মাস আগে tetanus toxoid নিয়ে থাকেন তাহলে নেওয়ার কোনো দরকার নেই।
  • তবে, কাঁটার ৩ মাস আগে TT নিয়ে থাকলে, আবার TT নেওয়া যায়। কেননা, একবার TT করলে ৯০ দিন পর্যন্ত অ্যাকশন থাকে। এটা ৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাটা ছিঁড়ার ক্ষেত্র।

 

কীভাবে এই রোগ ছড়ায়?

এটি প্রধানত যেকোনো ক্ষতস্থানের (Wound Infection) মধ্যে আক্রমণ করে শরীরে প্রবেশ করে টিটেনাস টক্সিন (একধরনের বিষাক্ত পদার্থ) ক্ষরণ করে এবং টিটেনাস রোগ সৃষ্টি করে।

এই রোগের কারণে –
  • মুখের ম্যাসেটার নামক মাংসপেশির সংকোচন এবং প্রসারণ বিঘ্নিত হয়। ফলে টিটেনাস আক্রান্ত ব্যক্তি একবার মুখ বন্ধ করলে আর মুখ খুলতে পারে না।
  • মুখের বিকৃত দেখা দেয়।
  • পিঠ বাঁকা হয়ে যায় কারণ ব্যাক সাইডের মাংসপেশির কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
  • ব্রেইনের কিছু্ সমস্যা দেখা দেয় ফলে হাত-পা কিছুক্ষণ পরপর অতিরিক্ত নাড়াচাড়া করে।
টিটেনাস রোধ করার জন্য কি কি করণীয় –
  • ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের (Reproductive Age Group – যারা সন্তান জন্মদানে সক্ষম) কে ৫ ডোজ টিটেনাসের ভ্যাক্সিন দেওয়া।
টিটেনাস  টীকা কবে কবে দিতে হবে? মেয়ে এবং মহিলাদের টিটেনাস সময়সূচি:
  1. টিটি ১: ১৫ বছর হলে,
  2. টিটি ২: টিটি ১-এর ২৮ দিন পর বা ৪ সপ্তাহ পর.
  3. টিটি ৩: টিটি ২-এর ৬ মাস পর,
  4. টিটি ৪: টিটি ৩-এর ১ বছর পর এবং
  5. টিটি ৫: টিটি ৪-এর ১ বছর পর।

এই ডোজ দেওয়া হলে সারাজীবনের জন্য টিটেনাস থেকে প্রোটেকশন দিবে।

প্রেগন্যান্ট / গর্ভবতী মহিলার যদি আগে থেকে টিটেনাসের ভ্যাক্সিন দেওয়া না থাকে তাহলে ২ ডোজের ভ্যাক্সিন দিতে হবে।

  1. ১ম ডোজ → প্রেগ্ন্যান্সির ১৬-২০ সপ্তাহের মধ্যে
  2. ২য় ডোজ → প্রেগ্ন্যাসির ২০-২৪ সপ্তাহের মধ্যে

আর যদি আগে থেকে ভ্যাক্সিন দেওয়া থাকে তাহলে একটিমাত্র বুস্টার ডোজ দিতে হবে। এটি ৫ বছর পর্যন্ত প্রোটেকশন দিবে। ভ্যাক্সিন দেওয়া থাকলে বাচ্চা জন্মের সময় টিটেনাস হওয়ার রিস্ক কমায়। কখনো কোনো লোহার জিনিসপত্র দ্বারা চাপ খেলে ; (যেমন – পেরেক দিয়ে শরীরের কোনো অংশে ক্ষত হলে, গেট দিয়ে চাপ খেয়ে শরীরের কোনো অংশে কেটে গেলে বা পুরনো মরিচা পড়া লোহার টিনের সাথে লেগে কেটে গেলে ইত্যাদি) ২-৪ দিনের মধ্যে টিটেনাস টক্সোয়েড (ভ্যাক্সিন) এবং টিটেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (এন্টিবডি) এর ডোজ দিতে হবে একসাথে। তাহলে ঐ ব্যক্তির টিটেনাস হবে না।

মর’ণঘাতি টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার কখনো জং ধরা লোহা বা পেরেক অথবা মাঠিতে পরে থাকা নোংরা যে কোনো কিছু দিয়ে কেটে গেলে এই রোগ হবার সম্ভবনা বেশি থাকে ৷ তাই অবহেলা না করে ২৪ ঘন্টা অতিক্রম হবার আগেই ভ্যাকসিন নিবেন।”ক্লোস্ট্রিডিয়াম টিটানি” ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে টিটেনাস হয়, যা সাধারণত মাটি, লালা, ধুলো এবং সারে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়াটি সাধারণত দূষিত বস্তুুর দ্বারা সৃষ্ট কাঁটা বা খোঁচার মত চামড়ার ক্ষতর মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে।

এটি একটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ। ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর নাম Clostridium tetani (ক্লসট্রিডিয়াম টিটেনি)।Tetanus (টিটেনাস) রোগ এবং ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া। ভ্যাক্সিনের দাম – ১০০/= এর মতো। ফার্মেসী তে সবসময় পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালে ফ্রিতে দেওয়া হয় এই  ভ্যাক্সিনেশন। দরকার হলে খোঁজ নিয়েন। শিশুর জন্মের পর ইপিআই (একধরনের ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম) এর মাধ্যমে শিশুর দেড় মাস, আড়াই মাস, সাড়ে তিন মাস বয়সে মোট ৩ ডোজ ভ্যাক্সিন দিতে হবে। DPT ভ্যাক্সিন দিতে হয়। এই ভ্যাক্সিন ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, টিটেনাসের বিরুদ্ধে প্রোটেকশন দিবে। অবশ্যই নিজের সন্তান-সন্ততির বেলায় খেয়াল রাখবেন, এই ভ্যাক্সিনগুলা দেওয়া জরুরী।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top