সরকারের এ মেয়াদেই পাস হবে কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট আইন। সেবিকা দেবনাথ : সরকারের এ মেয়াদেই পাস হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮। আইনটি বর্তমানে মন্ত্রিসভায় রয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি পাস হতে পারে বলে ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসেম খান।
অধ্যাপক ডা. আবুল হাসেম খান বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কমিউনিটি ক্লিনিকে বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। তাই কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮ নামে একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে খসড়া আইনটি কেবিনেটে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সংসদের আগামী অধিবেশনেই তা পাস হবে। জানা যায়, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত ন্যাশনাল কমিটির সভায় স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা কারণে এ ট্রাস্ট গঠন আর এগোয়নি। পরবর্তী সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের জন্য ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত চাওয়া হয়। তার মধ্যে ১৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মতামত পাওয়া যায়।
সরকারের এ মেয়াদেই পাস হবে কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট আইন
সবার মতামতের ভিত্তিতে আইনের খসড়াটি তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর তা নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ট্রাস্ট সরকারি অনুদান, দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তির অনুদান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা, প্রবাসীদের স্বেচ্ছাধীন সহায়তা, সরকার অনুমোদিত বিদেশি উন্নয়ন সংস্থার অনুদান, সমাজের বিত্তবান, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং লটারির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থে পরিচালিত হবে। তবে কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী কিংবা তাদের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের দান- অনুদান নেয়া হবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিচালনার জন্য বেতনভাতা, ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র সরবরাহ, মেরামত ও রক্ষণাক্ষেণ ইত্যাদি কাজ ট্রাস্টের তহবিলে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকলে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব অথবা উন্নয়ন বাজেট থেকে ঘাটতি পূরণ করবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, ট্রাস্টের তহবিল ব্যবহার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা,কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ইউনিয়ন, উপস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কার্যকর রেফারেন্স পদ্ধতি তৈরি করা হবে। জানা যায়, ট্রাস্টের মূল কার্যালয় থাকবে ঢাকায়। তবে সরকার প্রয়োজনে দেশের অন্য কোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ট্রাস্টের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সহসভাপতি থাকবেন। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব অতিরিক্ত, এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানির এমডি, এফবিসিসিআই সভাপতি, ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি, তিনজন চিকিৎসক এ বোর্ডে সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সারা দেশে ১৩ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের পাটগাতি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।