সিবিসি টেস্ট কেন করা হয়? CBC রিপোর্ট বোঝার নিয়ম | CBC Blood Test Normal Range

রক্তের CBC (Complete Blood Count) পরীক্ষায় কী কী দেখা হয় উল্লেখ করুন। CBC Test এর রিপোর্ট বোঝার নিয়ম – CBC Test (Complete blood count)। CBC টেস্ট করে দেখা হয়, ব্লাড সেল টাইপ এবং ব্লাড সেলের কাউন্ট বা পরিসংখ্যান। একজন রোগীর শরীরে যে কোন সংক্রমণ দেখার জন্য CBC পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা শরীরের রোগ সম্পর্কে জানতে সাধারণ ধারণা পেয়ে থাকেন। এটি একটি টেস্ট প্রোফাইল। এর মধ্যে অনেকগুলো ধ্রুবক থাকে। ব্লাড সেল বা রক্ত কণিকার কাউন্ট বা পরিসংখ্যান দেখা হয় এর মাধ্যমে। রক্তের CBC (Complete Blood Count) পরীক্ষায় যা দেখা হয় তা হলোঃ

WBC (শ্বেত রক্তকণিকা)
  • Neutrophils(নিউট্রোফিল)
  • Lymphocytes(লিম্ফোসাইট)
  • Monocytes(মনোসাইট)
  • Eosinophils(ইসনোফিল)
  • Basophils(বেসোফিল)
RBC(লোহিত রক্তকণিকা)
  • Hemoglobin(হিমোগ্লোবিন)
  • HCT(হেমাটোক্রিট)
  • Platelets(প্লাটিলেটস)
  • MCV(এমসিভি)
  • MCH(এমসিএইচ)
  • MCHC(এমসিএইচসি)
  • RDW(আরডি ডব্লুউ)

CBC Blood Test Normal Range

CBC Test রিপোর্ট বোঝার নিয়ম

বৈশিষ্ট্য গণনা করে যার মধ্যে রয়েছেঃ
  • লােহিত রক্ত কণিকা যেটা রক্ত বহন করে,
  • শ্বেত রক্ত কণিকা যেটা জীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে,
  • হিমােগ্লোবিন, রক্তে অক্সিজেন বহনকারী প্রােটিন, প্লাটিলেটস, রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।

RBC দেখে যা বুঝবেনঃ

  • RBC বা রেড ব্লাড সেলের নরমাল ভ্যালু হচ্ছে প্রতি মাইক্রোলিটারে ৩.৫ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন সেলস।
  • রেড ব্লাড সেল কম থাকলে অ্যানিমিয়া হতে পারে। আর রেড ব্লাড সেল বেশি থাকলে ধরা হয় পলিসাইথেনমিয়া।

Hemoglobin দেখে যা বুঝবেনঃ

হিমােগ্লোবিনঃ লােহিতকণিকার একটি প্রয়ােজনীয় অংশ হল হিমােগ্লোবিন।হিমােগ্লোবিনই অক্সিজেনকে বহন করে এবং লােহিত কণিকার রক্তবর্ণের জন্য দায়ী।পরীক্ষায় হিমােগ্লোবিনের পরিমান সাধারণভাবে নির্দেশ করে দেহ কতটা অক্সিজেন পাচ্ছে।

  • পুরুষের নরমাল ভ্যালু হচ্ছে (১৩.৫-১৪ থেকে ১৭.৫-১৮) গ্রাম পার ডেসিলিটার।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১.৫ থেকে ১৬.৫ গ্রাম পার ডেসিলিটার।
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৩ গ্রাম পার ডেসিলিটার।
  • এই ভ্যালুর চেয়ে কম হলে অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে।

হেমাটোক্রিটঃ লােহিত কণিকা রক্তের কতটা অংশ (ঘনায়তন বা volume-এর মাপে) জুড়ে আছে সেটি বােঝাতে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি মাপা হয় শতাংশ বা পার্সেন্টেজ হিসেবে। যদি হেমাটোক্রিট ৪০ বলা হয়, তার মানে রক্তের ঘনায়তনের ১০০ ভাগের ৪০ ভাগ লােহিত কণিকাপূর্ণ।

  • (MCV) প্রতিটি লােহিত রক্ত কণিকার স্বাভাবিক আয়তন বােঝা যায়।
  • নরমাল ভ্যালু (৭৬-৯৬)fl
  • (MCHC) প্রতিটি লােহিত রক্ত কনিকার মধ্যে হিমােগ্লোবিনের ঘনত্ব নির্দেশ করে।
  • নরমাল ভ্যালু ৩১-৩৫ gm/dl
  • (MCH) প্রতিটি লােহিত রক্ত কনিকার পরিমান নির্দেশ করে।
  • নরমাল ভ্যালু ২৭-৩২ pg

 

(WBC) বা হােয়াইট ব্লাড সেল দেখে যা বুঝবেনঃ

শ্বেত রক্ত কণিকা বা WBC কে ডিজিজ ফাইটিং সেল (leukocytes) বলা হয় যেটা আমাদের শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যখন কোনাে বাইরের অথবা অপরিচিত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে WBC সেটাকে সনাক্ত করে এবং রােগ বিস্তার করার আগেই ধ্বংস করে। যেহেতু আমাদের শরীরকে অনেক ধরনের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে হয় সেহেতু শ্বেত রক্ত কনিকা অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এই বিভিন্ন ধরনের WBC কাজ একটি আরেকটি থেকে আলাদা। এরা তাদের নিজস্ব গতিতে কাজ করে।

শ্বেত রক্ত কনিকার ধরন ৫টিঃ

  1. নিউট্রোফিল
  2. লিম্ফোসাইট
  3. মনােসাইট
  4. ইউসিনােফিল
  5. বেসােফিল

গড়ে স্বাভাবিক মাত্রায় প্রতি মাইক্রোলিটারে ৪০০০ থেকে ১১০০০ থাকতে পারে। নবাগত শিশুদের এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেটা স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে।

৫ ধরনের শ্বেত রক্ত কনিকার নরমাল ভ্যালুর স্বাভাবিক মাত্রা শতকরা হলােঃ

  1. নিউট্রোফিলঃ ৪৫ – ৭৫ %
  2. লিম্ফোসাইটঃ ২০ – ৪০%
  3. ইউসিনােফিলঃ কমপক্ষে ৭ %
  4. মনােসাইটঃ ১ – ১০ %
  5. বেসােফিলঃ কমপক্ষে ১ %

 

(১) নিউট্রোফিল হলাে শক্তিশালী শ্বেত রক্ত কনিকা যেটা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে ধ্বংস করে।
(২) লিম্ফোসাইটের প্রধান কাজ হলাে এন্টিবডি তৈরি করা যেটা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং আগত ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা করে,যদি লিম্ফোসাইট কমে যায় তা হলেঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাল রোগ, রক্তাল্পতা, oncologic রোগ, Cushing এর রোগ ইত্যাদ।
(৩) বেসােফিল দায়িত্ব হলাে বিভিন্ন ক্যানসারের এবং পরজীবী কোষগুলােকে ধ্বংস করা
(৪) মনোসাইটের কাজ যখন দেহে কোনাে নির্দিষ্ট জীবাণু আক্রমণ করে তখন দ্রুত সেটাকে প্রতিরােধ কর যেমন- ক্যানসারের জীবাণু, মৃত কোষ ইত্যাদি।
(৫) ইউসিনােফিলের শরীরকে বিভিন্ন এলার্জির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।বেসােফিলের নরমাল ভ্যালু থেকে কম থাকলে শরীর এলার্জির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না এবং শরীরে এলার্জি বেড়ে যাবে।

WBC স্বাভাবিক পরিমানে থাকা দরকার। যদিও এটি বেড়ে যাওয়া কোনাে নির্দিষ্ট রােগকে বােঝায় না তবুও এটি কিছু কিছু সমস্যাকে নির্দেশ করে যেমন- ইনফেকশন, মানসিক চাপ, প্রদাহ (inflammation), এলার্জি, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, লিউকেমিয়া, ধূমপান, ঘন ঘন জ্বর অথবা এই জাতীয় সমস্যা।যাদের WBC বেশি থাকে তাদের অবস্থাকে বলা হয় লিউকোসাইটোসিস এবং এটির উপসর্গ হতে পারে- জ্বর, হতাশা, রক্তক্ষরণ, ওজন কমে যাওয়া এবং শরীরে ব্যথা।

নরমাল ভ্যালু থেকে যদি WBC কম থাকে তাহলে ধরে নেয়া হয় শরীরে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কম। এই অবস্থাকে লিউকোপেনিয়া (leukopenia) বলা হয়।WBC কমে যাওয়ার কারণগুলােকে নির্দেশ করে। যেমন- বােন মেরুর সমস্যা, রিমিটয়েড আথ্রাইটিস (যেটার ফলে জয়েন্টে ব্যথা হয়), অটোইমিউন ব্যাধি (autoimmune disease) শরীরকে নিজের ফাইটিং সেল ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়), কিছু ধরনের ইনফেকশন।

 

প্ল্যাটেলেট কমে গেলে গেলে কি হতে পারেঃ

  1. ইনফেকশনের কারনে প্ল্যাটেলেটস কমে যেতে পারে।
  2. ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটেলেটের পরিমান কমে যায়।
  3. বর্ধিত প্লীহা বা বদমেজাজ প্ল্যাটেলেট কমে যাওয়া নির্দেশ করে।
  4. প্ল্যাটেলেটস বােন মেরুতে গঠিত হয় তাই বােন মেরুতে ইনফেকশন হলে কোষগুলাে দমন হতে থাকে যেটা প্ল্যাটেলেটের ভ্যালু কমিয়ে দেয়।
  5. কেমােথেরাপি দিলে বােন মেরু প্রভাবিত হয় যেটা প্ল্যাটেলেটের ও হােয়াইট ব্লাড সেলের ব্যাঘাত ঘটায়।

প্লাটেলেট বেড়ে গেলে যে যে সমস্যা হয়ঃ

মাথা ব্যথা, মাথা ঘােরা, বুকে ব্যাথা, দুর্বল অনুভব করা,ক্ষনিকের জন্য দৃষ্টি শক্তি পরিবর্তন হওয়া, হাতে ও পায়ে অসাড়তা অনুভব করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top