শিশুদের প্রাইমারি দাঁতের খুব কমন একটা সমস্যার নাম নার্সিং বটল ক্যারিজ। এটি এক প্রকার দন্তক্ষয়। চলুন, আজ এই দন্তক্ষয়ের বিষয়ে কিছু জেনে নিই। যেমন অনেক বাচ্চা খেতে চায় না বলে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে ফিডার দিয়ে খাওয়ানো হয় কিংবা অভ্যাসবশত রাতে দুধ খেতে খেতে অপরিষ্কার মুখেই শিশু ঘুমিয়ে পড়ে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, অনেক ছোটো বয়সেই শিশুদের এই দন্তক্ষয় হয়ে থাকে।
নার্সিং বটল ক্যারিজ কেনো হয়?
মূলত দন্তক্ষয় একটি multifactorial disease, অর্থাৎ কয়েকটি factor একসাথে মিলে গেলে এই রোগ সৃষ্টি হয়। “ফার্মেন্টেড হয় এমন শ্যুগার (শর্করা) যুক্ত খাবার” মুখে “দন্তক্ষয়কারী জীবাণুর উপস্থিতিতে” “ক্ষয়প্রবণ দাঁতের ওপর” “দীর্ঘ সময় ধরে” অবস্থান করলে দাঁত ক্ষয় শুরু হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে দাঁত ক্ষয়ের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় যখন শিশু লম্বা সময় ধরে(সাধারণত রাতে) নার্সিং বটল অর্থাৎ ফিডারে করে কিংবা পেসিফায়ারে করে দুধ বা মিষ্টি কিছু খায়।
নার্সিং বটল ক্যারিজ দেখতে কেমন হয়?
এক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর ওপরের পাটির সামনের দিকের চারটি দাঁত কালো বা কালচে খয়েরি হয়ে আছে, ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দাঁত ক্ষয় হয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে দাঁতের আকার আকৃতি অস্বাভাবিক দেখায়। শিশু আক্রান্ত দাঁতে অতি সংবেদনশীলতা এবং ব্যথা অনুভব করতে পারে। উল্লেখ্য যে, দাঁতের কিছু developmental defect এও এই ধরণের লক্ষণ থাকে। তাই কোনটা ক্যারিজ আর কোনটা developmental defect, এ নিয়ে কনফিউশনে না ভুগে বরং রোগ নির্ণয়ের ভারটা ডেন্টাল সার্জনের ওপরেই ছেড়ে দিন।
শিশুর দন্তক্ষয় হলে কী করবো?
উত্তরটা কিন্তু একেবারেই obvious! মুখে সমস্যা, একজন ডেন্টাল সার্জনের (বিডিএস) কাছে গিয়ে দেখাবেন। প্রফেশনাল পরামর্শ নেবেন, দরকার মতো চিকিৎসা করাবেন। সন্তানের সুস্থতা চাইলে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোনও অপশন নেই!
“এই দাঁত পড়ে গিয়ে তো নতুন দাঁত আসবেই, ওটা ঠিকঠাক ব্রাশ করলেই হবে। করালাম না দুধ দাঁতে চিকিৎসা! কী আর হবে।” – জানলে অবাক হবেন, এই যুগেও বহু অভিভাবক এই ধরণের চিন্তাধারা পোষণ করেন। যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন, তাঁদেরও একটা বড়ো অংশ দেখা যায়, বাচ্চার সামনের দাঁত কালো হয়ে ভেঙে যাওয়ায় দেখতে খারাপ লাগছে কিংবা ক্ষয় এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে ব্যথায় বাচ্চার স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, সেই চিন্তা থেকে আসেন। অনেক শিশুকে আমরা প্রথমবারেই এমন অবস্থায় পাই যে, দাঁত ক্ষয় হতে হতে মাড়ির সাথে এক সমতলে চলে এসেছে, দাঁতের ক্রাউন বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। অথচ অভিভাবকদের বোঝা উচিত, দাঁতের ক্ষয় মানে শুধু দাঁতটাই ক্ষয় হচ্ছে, তা নয়। এটি বিভিন্নভাবে শিশুর শরীর এমনকি মনেরও ক্ষতি করছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে এই দন্ত ক্ষয়! তাই সময়মতো চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে অভিভাবকদের বোধোদয় জরুরি।
প্রতিরোধের কোনও উপায় আছে কি?
নিশ্চয়ই! নার্সিং বটল ক্যারিজ একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, কেবল অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে বহু শিশুকে এই প্রতিরোধযোগ্য সমস্যায় ভুগে কষ্ট পেতে দেখা যায়! আসলে প্রতিরোধের চেষ্টা আর প্রয়োজনে আশু প্রতিকার – দু’টোই সমান জরুরি।
নার্সিং বটল ক্যারিজ প্রতিরোধে যা করণীয়:
- শিশুকে শ্যুগারযুক্ত খাবার দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান।
- রাতে ঘুমের মাঝে পারতপক্ষে মুখে নার্সিং বটল বা ফিডার না দেওয়া।
- খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস না করিয়ে রাখতে পারলে ভালো।
- সঠিক বয়সে সঠিক নিয়মে শিশুর দাঁত, মুখ পরিষ্কার করা।
- শিশুর দাঁত, মুখের দিকে খেয়াল রাখতে হবে কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা যায় কিনা। সব সমস্যা সাধারণ চোখে দৃশ্যমান না-ও হতে পারে, তাই ৬ মাস পর পর BDS ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত-মুখের চেক আপ করিয়ে নিলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
Dr. Iffat Samrin Muna
Oral and dental surgeon.