আপনারা জানেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা প্রতিনিয়ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি কিন্তু অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি এ সেবাদাতাদের বেতন আজ সাড়ে ৯ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে।
গত মাসের শেষের দিকে আমাদের মধ্য থেকে ১৩২৮৯ জন ৩.৫ মাসের বেতন-বোনাস পেলেও আমরা ২০২২ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত ৬৯০ জন সিএইচসিপি এবং ১২ জন হেড অফিসের কর্মী বেতন পাইনি। দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস যাবত বেতন না পাওয়ায় আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। বেতন না পাওয়ায় আমরা ঈদের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হয়েছি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কপি
২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ৪ ধাপে জনবল নিয়োগ করে (২০১১, ২০১৫, ২০১৮ ও ২০২২ সালে)। বর্তমানে ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে রাজস্বখাতে অস্থায়ীভাবে ১৩৯৪৯টি পদ সৃজিত রয়েছে।
এই পদগুলো পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষ গত ১৫.১২.২০২৪ ইং তারিখে আমাদের সকলের কাছ থেকে ট্রাস্টের অনুকূলে যোগদানের আহবান করেন। আমরা সকলেই ট্রাস্টের অনুকূলে যোগদান করি। সৃজিত সকল পদের বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় বেতনের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও কর্তৃপক্ষ ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন দিলেও ২০২২ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন দেয়নি।
আমরা মনে করছি আমাদের সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের নিয়োগকৃতদের বেতন প্রদানের পরেও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ৬৫০ টি পদের অধিক পদের জন্য বেতন প্রদানের সুযোগ ছিল। কিছুদিন যাবৎ আমরা কর্তৃপক্ষের কর্তাদের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি শুধুমাত্র ২০২২ সালের নিয়োগকৃতদের ট্রাস্টে ন্যাস্ত করা হবে না, আমাদের জন্য নতুন করে প্রকল্প পাশ করা হবে। ট্রাস্টে প্রায় ৬৫০টি পদ শূন্য এবং উক্ত
পদের বিপরীতে অর্থ বরাদ্ধ থাকার পরেও আমাদের কেন ট্রাস্টে ন্যাস্ত করা হবে না এ বিষয়ে জানতে আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাইনি ।
আমরা একই প্রতিষ্ঠানে দ্বৈতনীতি চাই না। কর্তৃপক্ষ কিছু কর্মীকে স্থায়ীকরণ করে এবং কিছু কর্মীকে প্রকল্পে স্থানান্তারের যে দ্বৈত নীতির প্রণয়ন করে ২০২২ সালের নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথে বৈষম্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মহান সংসদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন পাস হয় এবং ৮ অক্টোবর ২০১৮ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এই আইনের ২৪ (ঙ) ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে “RCHCIB প্রকল্প ও CBHC অপরেশনাল প্লানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মচারীর চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাস্টে ন্যাস্ত হইবে” ।
আইন অনুযায়ী কর্মচারীর একটি অংশকে স্থায়ী করে অপর একটি অংশকে প্রকল্পে স্থানান্তরের সুযোগ নাই।
তারপরেও একটি মহল ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পদ এবং বরাদ্ধ থাকার পরেও আমাদেরকে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করে প্রকল্প পাশ করাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এমনটা হলে মহান সংসদ এবং আইনের লঙ্ঘন হবে।
এ সম্পর্কে গত ০৯.০৪.২০২৫ ইং তারিখ আমরা কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি প্রদান করি
কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিল গত রবিবার অথবা আজ মঙ্গলবার আমাদের সাথে সমাধানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসবেন। কিন্তু আমাদের ডাকা হয়নি। তাই আজ আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবিঃ
১। ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোতে সৃজিত সকল পদে কর্মী ন্যান্তকরণ পূর্বক চাকুরী স্থায়ী করতে হবে এবং আজকের মধ্যে আমাদের পদায়নের চিঠি করতে হবে।
২। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন ২০১৮ এর ২৪(ঙ) ধারার বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩। অনতিবিলম্বে আমাদের ৯ মাসের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট আইন ২০১৮ এর ২৪(ঙ) ধারার পাশাপাশি আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণের পক্ষে আরও কিছু যুক্তি তুলে ধরছি।
১) আমরা ০১/০৩/২০২৩ তারিখে যোগদান করি এবং যোগদানের পর থেকে ২ বছরেরও অধিক সময় যাবৎ
অত্যন্ত সুনাম ও কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদান করে আসছি এবং
এখনও কর্মরত আছি।
২) ২০২২ সালের জনবল নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
৩) ২০২২ সালে শূন্যপদের কথা উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং আমাদের শূন্যপদে নিয়োগ
করা হয়।
৪) ২০২২ সালের নিয়োগ ট্রাস্টের খসড়া প্রবিধানের নিয়োগবিধি প্রতিপালন করে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে হয়েছিল ।
৫) ২০২২ সালের নিয়োগের যোগদান কার্যক্রম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পদ সৃজনের সম্মতির পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছিল ।
৬) আমাদের আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (আরপিটিআই) এ ১.৫ মাস তত্ত্বীয় এবং ১.৫ মাস
জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যবহারিক (মোট ৩ মাস) মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে
তোলা হয়েছে।
৭) বর্তমানে ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোতে সৃজনকৃত ১৩৯৪৯টি পদ রয়েছে ও অর্থ মন্ত্রণালায় সমুদয় পদের
বিপরীতেই অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছে এবং বিধি অনুযায়ী ২০১১, ২০১৫, ২০১৮ সালে নিয়োগকৃতদের দিয়ে
তালিকা পূরণের পরেও ট্রাস্টে ২০২২ সালের নিয়োগকৃতদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শূন্যপদ থাকে ।
৮) ট্রাস্ট সকল কর্মচারীর কাছ থেকে ট্রাস্টে যোগদানের আহবান করে এবং আমরা ১৫.১২.২০২৪ খ্রিঃ পূর্বাহ্নে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের অনুকূলে যোগদান করি এবং ট্রাস্ট আমদের যোগদানপত্র গ্রহণ করে ।
ট্রাস্ট আইন ২০১৮ঃ
২৪। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, সমঝোতা স্মারক, চুক্তি বা অন্য কোনো দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে-
- (ক) ৩০ জুন ২০১৫ এ সমাপ্ত ‘Revitalization of Community Health Care Initiatives in Bangladesh (RCHCIB)’ শীর্ষক প্রকল্প, অতঃপর সমাপ্ত প্রকল্প বলিয়া উল্লিখিত, এবং ‘Community Based Health Care’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যান, অতঃপর উক্ত প্ল্যান বলিয়া উল্লিখিত, উহার কার্যালয়ের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও জামানত, সকল দাবি, হিসাব বহি, রেজিস্টার, এবং অন্যান্য দলিল ট্রাস্টে ন্যস্ত হইবে;
- (খ) সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের অধীন প্রকল্প কার্যালয় বা কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃক কৃত কোনো কার্য বা গৃহিত ব্যবস্থা বা ইস্যুকৃত বিজ্ঞপ্তি ট্রাস্ট কর্তৃক কৃত, গৃহিত বা ইস্যুকৃত বলিয়া গণ্য হইবে;
- (গ) সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের সকল দায়-দায়িত্ব ট্রাস্টের দায়-দায়িত্ব বলিয়া গণ্য হইবে;
- (ঘ) সমাপ্ত প্রকল্প ও অপারেশনাল প্ল্যানের বিরুদ্ধে বা তৎকর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বা ট্রাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা বলিয়া গণ্য হইবে;
- (ঙ) ‘Revitalization of Community Health Care Initiatives in Bangladesh (RCHCIB)’ প্রকল্প এবং ‘Community Based Health Care’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মচারীর চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাস্টে ন্যস্ত হইবে এবং উক্ত প্রকল্প ও প্ল্যানের অধীন চাকরির জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী তাহাদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে এবং দেশে প্রচলিত অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় তাহাদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি এবং অবসরভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হইবে।