দাঁড়াশ সাপ | Ptyas Mucosa – Rat Snake

দাঁড়াশ সাপের প্রিয় খাবার ইঁদুর । তার এই প্রিয় খাদ্যর জন্যে ইংরেজিতে Rat snake নামকরন হয়েছে । দাঁড়াশ সাপ ইঁদুর খেয়ে কৃষকের প্রচুর উপকার করে । দাঁড়াশ সাপ কৃষি জমিতে থাকতে পছন্দ করে এবং যে জমিতে থাকে তার আশপাশে প্রায় ৩ একর এলাকায় ইঁদুর শিকার করে। ফলে ইঁদুরের কারণে প্রতি বছর যে খাদ্যশস্য বিশেষ করে ধান ও গম অ অন্যান্য ফসলহানী ঘটে তা থেকে রক্ষা মেলে। ওফিওলজির পরিভাষায় এদের দুইটা উপাধি রয়েছে।

১. “Diurnal” অর্থাৎ দিনের বেলায় চলাচল করে। তারমানে এই না যে রাত্রে চলাচল করেনা। খাদ্যের প্রয়োজনে রাতেও গোয়ালঘরে, বসতঘরে ঢুকে যেতে পারে।

২. “semi-arboreal” সেমি আরবোরিয়াল অর্থ ওরা গাছেও থাকতে পারে। সবসময়ই যে গাছে থাকবে তা নয়। তবে গাছেও ভালো চড়তে পারে এবং গাছেও থাকে। এরা গড়ে ৬-৮ বছর বাঁচে।

দেশি দাঁড়াশ সাপের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ মিটার বা ১১-১২ ফুট পর্যন্ত হয় , লেজ সুচালো,লেজের দৈর্ঘ্য দেহের মোট দৈর্ঘ্যের ২৫-২৯%। দেহ লম্বা এবং নলাকার। দেহ হলুদ, হলদে বাদামী, জলপাই বা ধূসর থেকে কালো রঙের, দেহের পিছনের অংশে হালকা বা সুস্পষ্ট ব্যান্ড থাকে। ঠোট ও গলা সাদাটে এবং ঠোটের আঁইশ লম্বা রেখার মাধ্যমে পৃথক। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সাপ ঈষৎ জলপাই রঙের এবং দেহের সম্মুখভাগে কালো আড়াআড়ি ব্যান্ড থাকে। ম্যাক্সিলারী দাঁতের সংখ্যা ২৫টি পর্যন্ত হতে পারে। আঁইশ মসৃণ বা উপরের সারির আঁইশ মোটামটি স্পষ্ট শিরযুক্ত। স্থান ও আবহাওয়া ভেদে এরা ৫/৬ কালারের হয়।

দাঁড়াশ সাপ না চেনা থাকলে হঠাৎ করে দেখে গোখরা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গোখরার ফনা আছে, দাঁড়াশ সাপের ফনা নেই এবং ওর গলার কাছটা সরু। দাঁড়াশ সাপ নিয়ে দুটো ভুল বিশ্বাস মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত আছে । তার একটা হচ্ছে দাঁড়াশ সাপের লেজ দিয়ে আঘাত করলে নাকি পচে যায় । আরেকটা ভ্রান্ত ধারণা হলো দাঁড়াশ সাপ নাকি গরুর বাঁট থেকে দুধ খায়। এটা একেবারে ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার । কারণ সাপের চোষন ক্ষমতা নেই, সাপের জিভ দুই ভাগে বিভক্ত, নিচের চোয়াল টা আলগা, দাঁত গুলো পেছনদিকে বাঁকানো, ফুসফুসেও অতো জোর নেই এবং পৃথিবীর সমস্ত সাপ মাংসাশী। ব্যাং, টিকটিকি, ইঁদুর এসব খেয়ে তারা জীবণ ধারণ করে। দুধ সাপের খাদ্য নয়। লেজের মধ্যেও কাটা নেই ।

  • নাম: দাঁড়াশ সাপ।
  • ইংরেজি নাম- Rat snake.
  • বৈজ্ঞানিক নাম- Ptyas mucosa.
  • প্রচলিত নাম- দাঁড়াশ, দাড়াইল, ঢ্যামনা, দারাজ, ডারাইস ইত্যাদি।
  • বিষের ধরন: নির্বিষ।

দাঁড়াশ সাপ | Ptyas Mucosa – Rat Snake

 

খাদ্য তালিকাঃ ইঁদুর , টিকটিক, ব্যাঙ,পাখির বাচ্চা ,পাখির ডিম ইত্যাদি।

অঞ্চলঃ সারা বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এদের দেখা মিলে। এজন্য একে বাংলাদেশের আবাসিক সাপ বলে।

বর্ণনাঃ স্থানভেদে এদের প্রজননের পার্থক্য হয়, সাধারণত মে-জুন মাসে এদের প্রজননকাল সম্পন্ন হয়। স্ত্রী সাপ মার্চ এবং সেপ্টেম্বর মাসে গুচ্ছে ১২-১৪ টি চকচকে সাদা ডিম পাড়ে, । ডিম আঠালো এবং একটির সাথে অপরটি যুক্ত থাকে এবং স্ত্রী সাপ ডিমের উপর কুন্ডলী পাকিয়ে অবস্থান করে। পরিস্ফুটনকাল প্রায় ২ মাস এবং সদ্য পরিস্ফুটিত সাপের দৈর্ঘ্য ৩৬-৪৭ সেমি হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সাপ ১ বছরে দ্বিগুণ লম্বা হয় এবং যৌন পরিপক্কতা লাভের জন্য প্রায় ৩ বছর সময় লাগে।

চিকিৎসাঃ যেহেতু নির্বিস সাপ তাই এদের বাইটে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এরা কামড়ালে একদমই বিচলিত হবেন না। যেহেতু এরা মাংসাশী, তাই এদের অ্যাগ্লাইফাতে ব্যাক্টেরিয়া থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এরা কামড়ালে ক্ষতস্থানে দ্রুত সাবান পানি অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তাও মনে সংসয় থাকলে যেকোনো ফার্মেসি থেকে টিটেনাস টিকা নিয়ে নিতে পারবেন। তাহলে ইনফেকশনের ভয় থাকবেনা।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top