সাইবোল্ডের পাইন্যা সাপ | Ferania sieboldii

রংপুর বিভাগের পুকুর, খাল-বিল, নদী, ধানখেত প্রভৃতি মিঠা পানির পরিবেশে একে দেখতে পাওয়া গিয়েছে কয়েক বার। আপনারা জানলে আনন্দিত হবেন, দেশের প্রথম উদ্ধারকৃত Siebold’s water snake আমাদের সংগঠনের। WSRTBD এর সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান ভাই বাংলাদেশ প্রথম এই সাপটা উদ্ধার করেছেন। ২০২১ সালের ৩০ শে অক্টোবর লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের গীরিধারী নদীতে মাছ ধরার জাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো সি বোল্ড ওয়াটার স্নেক(siebold’s water snake) জীবিত উদ্ধার করেন তিনি। যেটার লাইভ স্পেসিমেন গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে রয়েছে। ২০২২ সালের ৩ রা মার্চ একই নদীতেই আবারো মাছ ধরার জালে ঐ প্রজাতির আরো একটি মৃত সাপ উদ্ধার করেছিলাম আমরা। গবেষণার কাজে এই তথ্যটা গোপন ছিলো এতোদিন, তবে এখন আমরা গর্বের সাথে তথ্যটা প্রচার করবো।

  • নামঃ- সাইবোল্ডের পাইন্যা সাপ।
  • ইংরেজি নামঃ- Siebold’s water snake/Siebold’s Mud Snake.
  • বৈজ্ঞানিক নামঃ- Ferania sieboldii.
  • প্রচলিত নামঃ- সারা দেশে পাওয়া যায়না বললেই চলে, তাই প্রচলিত নামেরও প্রচলন নেই।
  • বিষের ধরনঃ- মৃদু বিষধর, মানুষের জন্য একদমই ক্ষতিকর নয়।
  • খাদ্য তালিকাঃ- প্রধানত মাছ খেয়ে থাকে। এছাড়াও ব্যাঙ এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীও খায়।

Siebold’s water snake/Siebold’s Mud Snake

 

বর্ণনাঃ Siebold’s water snake সাধারণত গাঢ় জলপাই সবুজ এবং বাদামী রঙের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। গাঢ় জলপাই সবুজ রংয়ের দেহের উপর বাদামী বর্ণের অসম এবং অপূর্ণাঙ্গ ব্যন্ড দেখা যায়। ঘাড় থেকে পূর্ণাঙ্গ ব্যান্ড শুরু হলেও কিছুটা নিচ থেকে ব্যান্ডের অপূর্ণতা চোখে পরে। এদের ব্যান্ড গুলো দেহের পাশের দিকে পিঠের তুলনায় বেশ মোটা হয়। এমন রংয়ের ফলে এরা খুব সহজে প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে ছদ্মবেশে শিকার করতে পারে। এদের দেহ মাথা এবং লেজের তুলনায় কিছুটা মোটা। লেজের দিকটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেছে।

মাথা চারকোনা আকৃতির এবং ঘাড় থেকে কিছুটা পৃথক হয়ে চ্যাপ্টা আকার ধারণ করেছে। দেহের তুলনায় মাথা ছোট হয়ে থাকে। চোখ ছোট এবং চোখের মনি উলম্বভাবে (Vertically) উপবৃত্তাকার (Elliptical)। তারা রন্ধ্রের এমন আকৃতির ফলে এরা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শিকারের কাছে গিয়ে শিকারকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে হঠাৎ আক্রমণ করে শিকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই। এই পদ্ধতিতে অ্যাম্বুস হান্টিং বলে। এই সাপগুলো আমাদের দেশে প্রাপ্ত বেশিরভাগ সাপের মতো ডিম দেয়না, ফিমেল সাপ সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। যার ফলে এদেরকে viviparous বা জরায়ুজ সাপ বলা হয়। ফিমেল সাপ ৭টি পর্যন্ত ভ্রূণ বহন করে এবং বর্ষা মাসে সন্তান প্রসব করে।

এদের ventral area বা পেটের অংশ হলুদাভ হয় এবং dorsal scales বা পিঠের আঁশ চকচকে মসৃণ (Glossy smooth scale). এরা মাঝারি আকারের সাপ, লম্বায় ২ থেকে ২.৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। Siebold’s water snake তার অদ্ভুত রং এর প্যাটার্ণের জন্য অজগর সাপের বাচ্চা এবং বালু বোরা সাপের সাথে অনেকটা মিলে যায়। অনেকেই এই সাপকে অজগর এবং বালুবোরার থেকে পার্থক্য করতে পারেনা। এই সাপের আচরণ একটু রাগী এবং ভয় পেলে কুন্ডলী পাকিয়ে লুকানোর চেষ্টা করে। বেশি বিরক্ত বোধ করলে কামড়ে দিতে পারে।

চিকিৎসাঃ সাইবোল্ডের পাইন্যা সাপ রেয়ার ফ্যাং যুক্ত মৃদু বিষধর সাপ। এদের প্রচলিত বিষথলির বিকল্প হিসেবে “ডুভেরনয়’স ভেনোম গ্লান্ড” নামক পরিবর্তিত বিষথলি থাকে, যেটাতে খুবই কম বিষ সংরক্ষণ এবং উৎপন্ন হয়। ফলে এদের কামড়ে মৃত্যু ঝুকি নেই। কামড়ালে আক্রান্ত স্থান ফুলে যাওয়া, ব্যথা করার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে৷ আক্রান্ত স্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।

নোটঃ অযথা সাপ মারা হতে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ৯৯৯ এ ফোন দিন অথবা বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করুন।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top