কালনাগিনী | Chrysopelea Ornata Ornatissima

বাংলাদেশে প্রাপ্ত (Chrysopelea ornata ornatissima) কালনাগিনী সাধারণত সবুজ রঙের হয়ে থাকে। শরীরজুড়ে কালো রঙের ব্যান্ড থাকে যার কিনারা হলুদ বা কমলা রঙের হয়ে থাকে। কিছু সাপের শরীরের শেষ পর্যন্ত লাল নকশা করা থাকে। বাচ্চা কালনাগিনী বেশি কালচে রঙের হয়ে থাকে। দেহ চিকন। মাথার সামনের দিক ভোতা। মাথা ঘাড় থেকে চওড়া। চোখ বড় এবং চোখের মনি গোলাকার। কালনাগিনীর মাথায় হলুদ ব্যান্ড থাকে।

পেট হলুদাভ সবুজ। পেটের scales অমশৃন (Keeled)। এদের পেটের আঁশের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য এরা খুব ভালো খাড়া সার্ফেস বেয়ে উঠতে পারে। দেয়াল, নারিকেল বা পাম গাছে খাড়া উঠতে পারে। অনেক চিকন ডালেও সাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে। প্রায় ৪ ফুটের মত লম্বা হয়।

এদের নাম Flying snake হওয়ার কারণ এরা বাতাসে গ্লাইড করতে পারে। এরা সাধারণত বাতাসের গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে এক গাছের ডাল থেকে আরেক গাছে লাফ দেয়। লাফ দেওয়ার সময় শরীরকে চওড়া করে নেয়। এতে শরীর অ্যারোডাইনামিক হয়। এরা ১০০ ফুট পর্যন্ত গ্লাইড করতে পারে। ছোট সাপ সাধারণত বড় সাপের তুলনায় বেশি দূরত্বে গ্লাইড করতে পারে।

কালনাগিনী diurnal অর্থাৎ এরা দিনে চলাচল ও শিকার করে এবং arboreal অর্থাৎ বেশিরভাগ সময় এরা গাছে থাকে। এরা Oviparous snake অর্থাৎ ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। সাধারণত মে থেকে জুনের দিকে এরা ডিম পাড়ে। ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লম্বাটে ডিম পেড়ে থাকে। জুন মাসের দিকে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

  • নামঃ- কালনাগিনী।
  • ইংরেজি নামঃ- Ornate Flying Snake/ Golden Flying Snake.
  • বৈজ্ঞানিক নামঃ- Chrysopelea ornata ornatissima.
  • প্রচলিত নামঃ- আঞ্চলিক ভাবে এটি কালনাগিনী, উড়ন্ত সাপ, পঙখিরাজ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ নামে পরিচিত।
  • বিষের ধরনঃ- মৃদু বিষধর, (নিউরোটক্সিন)।

খাদ্য তালিকাঃ এরা সাধারণত লিজার্ড, ইঁদুর, বাদুড়, পোকামাকড়, পাখির ডিম খেয়ে থাকে। মাঝে মাঝে সাপ খেতেও দেখা যায়। এরা অনুসরণ পদ্ধতিতে শিকার করে। অর্থাৎ অনেকক্ষণ শিকারের মুভমেন্ট ফলো করে এরপর সুযোগ মত আক্রমণ করে। এদের চোয়াল শক্তিশালী হয়ে থাকে। তা দ্বারা এরা শিকারের ঘাড়ে কামড়ে হত্যা করে।

বাসস্থান ও অঞ্চলঃ এটি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ এবং পাশ্ববর্তী দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং সুন্দরবনে এদের বিস্তৃতি রয়েছে।এরা সাধারণত গাছের ফাটল, শিকড়ের নিচে, নারিকেল বা পাম জাতীয় গাছের উপর বাস করে। শহুরে অঞ্চলে খাদ্যের জন্য বিল্ডিংয়ের কার্নিশ বা ফাটলেও এদের দেখতে পাওয়া যায়।

বর্ণনাঃ Chrysopelea ornata প্রজাতির তিন টি উপপ্রজাতি (Subspecies) রয়েছে।
① Chrysopelea ornata ornata -ভারতে পাওয়া যায়।
② Chrysopelea ornata ornatissima – ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়।
③ Chrysopelea ornata sinhaleya – শ্রীলংকায় পাওয়া যায়।

 

চিকিৎসাঃ এদের বিষদাঁত রেয়ার ফ্যাং যুক্ত। অর্থাৎ সামনে কয়েক পাটি নিরেট দাঁতের পর এদের বিষদাঁত থাকে। বিষদাঁত সুগঠিত নয়। তাই সহজে বিষ প্রয়োগ করতে পারে না। এছাড়া মৃদু বিষধর হওয়ায় মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এদের বিষে র‍্যাশ, ফুলে যাওয়া, ব্যথা করার মত উপসর্গ দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জি থাকলে সমস্যা বেশি হতে পারে। মৃদু বিষধর সাপের দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করবে।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top