চন্দ্রবোড়া | Daboia Russelii

মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার, ঘাড় থেকে আলাদা অর্থাৎ মাথার তুলনায় ঘার সরু। মুখের থুথু ভোতা ও গোলাকার। নাকের ছিদ্র বড় । চোখ বড় এবং ১০-১৫ টি বৃত্তাকার আশঁ দিয়ে ঘেরা।দেহটি মোটাসোটা, শক্ত ও খসখসে। লেজ ছোটো যা দেহের মোট দৈর্ঘ্যের ১৪%। ২ টি ম্যাক্সিলারি হারে (Maxillary bones) কমপক্ষে ২টি এবং সর্বাধিক ৫ বা ৬ জোড়া ফ্যাং থাকে বা থাকতে পারে। ১ম জোড়া সক্রিয় থাকে এবং বাকি গুলো ভেঙ্গে গেলে পর্যায়ক্রমে প্রতিস্থাপন হয়। এদের ফ্যাং ২য় বৃহত্তম । ফ্যাং এর দৈর্ঘ্য ১৬.৫ মিমি বা .০.৬৫ ইঞ্চি হয়। এদের মলদ্বার প্লেট (Anal plate) বিভক্ত নয়।এদের ডর্সাল (Dorsall)বা পিঠের গায়ের রং হলুদ, গাঢ বাদামী, মাটিয়া বাদামী এবং কালো বলয় যুক্ত বা অর্ধচন্দ্রের মত যা সমস্ত বডিতে তিনটি সারিতে রয়েছে। Ventral বা পেটের স্কেল সাদা, হলুদ, এবং গোলাপী রঙের হয়। চোখের পিছনে একটি রেখা আছে।

এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১.২৪ মিমি বা ৪ ফুট ১ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। লেজের দৈর্ঘ্য ৪৩০ মিমি বা ১৭ ইঞ্চি হয়। বডির ঘের বা ব্যাসার্ধ ১৫০ মিমি বা ৬ ইঞ্চি হয়। মাথার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৫১ মিমি বা ২ইঞ্চি হয়। এরা নির্দিষ্ট আবাসস্থলে সীমাবদ্ধ নয়, এরা ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করে। বেশির ভাগই খোলা ঘাসযুক্ত বা হালকা ঝোপঝাড় এলাকায় থাকে। বনের বাগান বা কৃষি জমিতেও পাওয়া যায়। এরা গোখরো ও কালাচের মত মানুষের বসতবাড়ির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত নয়। তবে ইদুরের সন্ধানে বাসাবাড়িতেও যেতে পারে। এরা পুকুরের কচুরিপানার উপর শুইয়ে রোদ পোহাতে পছন্দ করে এবং কচুরিপানার ভেসে যাওয়ার মাধ্যমে একস্থান থেকে আরেক স্থানে অনায়াসে চলে যায়।

এরা নিশাচর কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়ায় দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে। প্রাপ বয়স্ক আক্রমনাত্নক থাকে ,জুভেনাইল গুলো নার্ভাস থাকে। নিজেকে বিপদ মনে হলে S লুপ ধারন করে মাটি থেকে শরীরের ১/৩ অংশ উপরে তুলে ক্ষীপ্র গতিতে ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে বাইট করতে পারে। রাসেলস ভাইপার ওভোভিভিপারাস (Ovoviviparos). সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। বছরের ১ম দিকে মেটিং বা সঙ্গম করে ছয় (০৬) মাস গর্ভবতী থেকে জুন-জুলাই মাসে ২০ থেকে ৪০ টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে। তবে ৭৫ টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এদের যৌন পরিপক্কতা ২-৩ বছরের মধ্যে অর্জিত হয়। বাচ্চা ৮.৫ ইঞ্চি থেকে ১০.২ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

 

  • নাম: চন্দ্রবোড়া।
  • ইংরেজি নাম- Russell,s viper, Chain viper, Indian Russell’s viper, Common Russell’s viper, Seven pacer, Chain snake, and Scissors snake.
  • বৈজ্ঞানিক নাম- Daboia russelii.
  • প্রচলিত নাম- জানা নেই।

 

চন্দ্রবোড়া | Daboia Russelii

নামকরন: ১৭৯৬ সালে স্কটিশ হারপিটোলজিস্ট প্যাট্রিক রাসেল (Scottish herpetologist Patrick Russell) সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করেন।এবং তিনি মুরগি ও কুকুরের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন এটি অত্যান্ত বিষধর সাপ। পরবর্তীতে ১৭৯৭ সালে ইংরেজ প্রকৃতিবিদ জর্জ শ (English naturalist George Shaw) এবং চিত্রকার ফ্রেডরিক পলিডোর নোডার (illustrator Frederick Polydore Nodder) দুজনেই আন্তর্জাতিক প্রাণিবিদ্যার নামকরণ কোডের ধারা 32c (ii) অনুযায়ী প্যাট্রিক রাসেল এর নামানুসারে Russell,s viper নামকরন করেন।

Daboia হলো দ্বিপদী নামকরনের ১ম অংশ যাকে জেনাস/গন/বংশ বলা হয়। Daboia হিন্দি শব্দ যার অর্থ লুকানো। বাংলায় চন্দ্রবোড়া বলা হয়, কারণ এটি তার সমস্ত শরীরে লেন্টিকুলার (lenticular) বা চন্দ্রের চিহ্ন বহন করে। Daboia পরিবারের চারটি প্রজাতি আছে:

  1. Daboia mauritanica – Moorish viper
  2. Daboia palaestinae – Palestine viper
  3. Daboia russeli – Russell’s viper
  4. Daboia siamensis– eastern Russell’s viper
  5. বিষের ধরন: হেমোটক্সিন (Hemotoxin):

খাদ্য তালিকা: এদের প্রধান খাদ্য ইদুর। তাছারাও ছোটো পাখি, টিকটিকি, ছোটোছোটো সরিসৃপ ইত্যাদি খায়। এরা খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে খাবার শিকার করে। এরা শিকারকে কামড় দিয়ে ছেরে দেয় এবং পিছে পিছে যায়। ইদুরকে কামড় দিয়ে ছেরে দিলে বিষের যন্ত্রনায় ইদুর ছটফট করতে করতে গর্তের মধ্যে যায় তারপর সেই গর্তে থাকা বাকি ইদুরগুলোকেও খেয়ে ফেলে।

অঞ্চল: ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্থান,মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ২০০৯ সালের পূর্বে গত ১০০ বছরে দেখা না যাওয়ায় ICUN কর্তৃক ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে হটাৎ করে রাজশাহীর চরাঞ্চলে দেখা যায়। ২০১৭ সালের পর থেকে পদ্মা ও মেঘনার তীরবর্তী এলাকা বরিশাল, ভোলা,পটুয়াখালি, চাদপুর, লক্ষিপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, শরিয়তপুরের নরিয়ায়, রাজশাহী, পাবনা, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ সহ ৬৪ জেলার মধ্যে ১৭/১৮ টি জেলায় পাওয়া যায়।

লক্ষন ও চিকিৎসা- হেমোটক্সিন বিষ হওয়ায় কামোড়ের সাথে সাথে ব্যাথা শুরু হয়। আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়। দাতের মাড়ি , প্রসাবের রাস্তা, থুথুর মাধ্যমে রক্তপাত হয়। রক্তচাপ কমে যায়। হৃদস্পন্দন কমে যায়, কামড়ের স্থানে ফোস্কা উঠে ।

১/৩ শতাংশ বমি ও ফুলে যায়। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে ২৫-৩০ শতাংশ কিডনি বিকল হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা ২-৪ সপ্তাহ স্থায়ি হতে পারে। লোহিত রক্তকনিকা ভেংগে যাওয়ার ফলে ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে শরীর ফুলে যায়। ১-১৪ দিন পর্যন্ত এই উপসর্গগুলো থাকতে পারে। রাসেল,স ভাইপারের এক কামড়ে ৪৫-৬০ মিগ্রাম বিষ প্রয়োগ করতে পারে যেখানে ৪২ মিলিগ্রাম বিষ একটা মানুষকে মারার জন্য যথেষ্ট। এদের ফ্যাং বড় ও ভিতরের দিকে বাঁকানো বিধায় ড্রাই বাইট এর সম্ভাবনা খুব কম।

চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকেরা Whole Blood Clotting Test বা WBCT20 নামক একটি পরীক্ষার সাহায্য নেন। এতে কাঁচের তৈরী পরিষ্কার এবং শুকনো একটি টেস্টটিউব এর মধ্যে সাপের কামড় খাওয়া রোগীর রক্ত নিয়ে তা ২০ মিনিট স্থির ভাবে রাখা হয়, যদি রক্ত তার মধ্যে সম্পূর্ণ জমাট না বাঁধে তবে বুঝতে হবে রোগীকে চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়েছে।

এমতাবস্থায় দ্রুত ১০ ভয়েল AVS স্যালাইন এর সাথে রোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে হবে। এরপর আবার নতুন করে WBCT20 টেস্ট করে দেখতে হবে, যদি তাতেও রক্ত না জমে তখন আবার ১০ ভয়েল AVS চালু করতে হবে।সাপের কামড়ের আধুনিক এবং একমাত্র ওষুধ ANTI VENOM SERUM বা AVS যত দ্রুত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো যাবে তত বেশী বাড়বে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। যেহেতু চন্দ্রবোড়ার কামড়ে রোগীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাই রোগীকে সবসময় এমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ যেখানে ডায়ালাইসিসের সুব্যবস্থা রয়েছে।

Share Please!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top